ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

‘ক্রমাগত চাপের মুখে বাংলাদেশি মিডিয়া’

aljazeera_124359সুপরিচিত একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক শফিক রেহমানকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রোববার বলেছেন, তাকে গ্রেপ্তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়। শফিক রেহমানকে (৮২) শনিবার তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। যারা তাকে গ্রেপ্তার করে তারা প্রথমে নিজেদেরকে স্থানীয় একটি টেলিভিশন স্টেশনের সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দেন। বলেন, তারা তার একটি সাক্ষাতকার নিতে চান।

শফিক রেহমান আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) সদস্য নন। কিন্তু তিনি এ দলের সঙ্গে নিবিড়ভাবে সংযুক্ত। সম্প্রতি তিনি দলটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক নিযুক্ত হয়েছিলেন।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ বাংলাদেশের ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাকে ‘গভীরভাবে রাজনৈতিকীকৃত’ ও ‘অকার্যকর’ বলে সমালোচনামুলক একটি রিপোর্ট প্রকাশের এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করা হলো। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে যে, আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অপরাধ দমনের চেয়ে বিরোধীদের টার্গেট করার দিকে তাদের মনোযোগ নিবদ্ধ করেছে।

কিন্তু আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আল জাজিরাকে বলেন, শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তারের সঙ্গে রাজনীতির কোন সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, আমার প্রশ্ন হলো যদি কেউ বিরোধী দলের সদস্য হন তাহলে তাকে কি দেশের আইসি ব্যবস্থা থেকে দায়মুক্তি দিতে হবে? যদি (বিএনপির কোন সদস্য) অপরাধ সংঘটিত করেন তাহলে কি তাকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিতে হবে?

তদন্তকারী কর্তৃপক্ষ বলছে যে, শফিক রেহমানের বিরুদ্ধে একটি সুনির্দিষ্ট মামলা আছে। তিনি কি বিএনপিকে সমর্থন করেন কিনা তার চেয়ে এ মামলায় অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ আছে কিনা তা দেখা এখন বেশি দরকার।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম শনিবার শফিক রেহমানকে জামিন দেয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। শফিক রেহমান অনেক বছর বহুল প্রচারিত বাংলা পত্রিকা যায় যায় দিন-এর স¤পাদক। সাম্প্রতিক সময়ে তিনি মৌচাকে ঢিল নামে একটি মাসিক ম্যাগাজিনের সম্পাদক।

তার স্ত্রী তালেয়া রেহমানের মতে, শনিবার একটি বেসরকারি টেলিভিশন বৈশাখি টিভির সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেন। তারা এ সময়ে তার স্বামীর একটি সাক্ষাতকার নিতে চান। তালেয়া রেহমান বেসরকারি সংগঠন ডেমোক্রেসি ওয়াচ পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, যখন আমার স্বামী প্রস্তুত হচ্ছিলেন সে সময়ে আমরা নিচতলায় বসা তিনজন ব্যক্তির জন্য চা ও নাস্তা পাঠিয়ে দিই। এরপর ওই তিন ব্যক্তি বাসার ওপরে উঠে আসেন এবং আমার স্বামীর সঙ্গে কথা বলেন। আমার স্বামী নিচে নেমে যান। তিনি ভেবেছিলেন তারা টেলিভিশনে তার সাক্ষাতকার নিতে এসেছেন। তখন তারা আমার স্বামীকে বলেন যে, তারা গোয়েন্দা শাখার লোক এবং তারা জোর করে তাকে নিয়ে যায়।

আইনমন্ত্রী বলেছেন, তিনি গ্রেপ্তারের সময়ে কি ঘটেছিল তার প্রকৃত ঘটনা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। তিনি বলেন, অন্যরা এ বিষয়ে আমাকে বলেছে। বিষয়টিতে আমাকে খোঁজখবর নিয়ে দেখতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ তার ফেসবুকে একটি পোস্ট দেয়ার পর ২০১৫ সালের আগস্টে একটি ষড়যন্ত্রের মামলা হয়। সজীব ওয়াজেদ ওই পোস্টে বিএনপির একজন নেতা সম্পর্কে একটি বার্তা দিয়েছিলেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রে এফবি আইয়ের গোপনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য আর্থিক সম্পর্কের বিষয়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। সজীব ওয়াজেদ এতে আরও বলেন, ‘বিএনপি আমাকে যুক্তরাষ্ট্রে অপহরণ ও হত্যা করার পরিকল্পনা করেছে’।

এ অপরাধের সঙ্গে তার স্বামীর কোন সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা অস্বীকার করেছেন তালেয়া রেহমান। তিনি বলেন, ‘কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মানবাধিকার বিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। আমার মনে হয় সরকার ভেবেছে এ রিপোর্ট তৈরির জন্য তথ্য সরবরাহ করেছেন আমার স্বামী। তাই তারা তাকে গ্রেপ্তার করেছে’।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশে মিডিয়া রয়েছে ক্রমাগত চাপের মুখে। ফেব্র“য়ারিতে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি ভাষার পত্রিকার সম্পাদক মাহফুজ আনামের বিরুদ্ধে ১৭টি রাষ্ট্রদ্রোহের ও ৬২টি মানহানি মামলা করেছেন।

প্রধানমনন্ত্রীর পুত্র ফেসবুকে দেয়া পোস্টে বলেন যে, তার মাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির খবর প্রকাশের কথা স্বীকার করেছেন মাহফুজ আনাম। এরপরই ওই মামলাগুলো হয়েছে। মাহফুজ আনামের পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টার ও এর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান প্রথম আলো’র বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের আগস্ট থেকে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। শফিক রেহমানের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছেন জাতীয়তাবাদী দলের নেত্রী খালেদা জিয়া।

পাঠকের মতামত: